মামলুক সালতানাত :
মামলুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস
- “মামলুক” শব্দের অর্থ ক্রীতদাস। মামলুক (مملوك) দ্বারা রাজার “অধীন দাস” বোঝানো হয়।
১. মামলুক সালতানাত (দিল্লি) (১২০৬-১২৯০)
২. মামলুক সালতানাত (কায়রো) (১২৫০-১৫১৭)
৩. ইরাকের মামলুক রাজবংশ (১৭০৪-১৮৩১, উসমানীয় ইরাকের অধীন)
৪. বুরজি ও বাহরি রাজবংশ
মিশরের মামলুকরা তখনকার সময়ে সরাসরি সুলতানের তত্ত্বাবধানে দীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। সুলতান তাদের জন্য নীলনদের রাওজা দ্বীপে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে দেন। এখানে মামলুকরা সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ধর্মীয় ও আদর্শিক দীক্ষাও গ্রহণ করতেন।
মামলুকদের মধ্যে একে অপরের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। সহপাঠীদের মধ্যে ছিল 'খুশদাশিয়া' বা সাথী সম্পর্ক। আর মনিবদের সাথে ছিল ছাত্র-উস্তাদ সম্পর্ক। মনিবরা তাদের মামলুকদের সাথে গোলামের মতো ব্যবহার করতেন না; বরং উস্তাদের জন্য ছাত্রের সাথে যেমন আচার ব্যবহার করা দরকার, সেভাবেই করতেন।
মামলুক শব্দের বহুবচন মামালিক। পূর্ববর্তী যুগ থেকেই বিভিন্ন উদ্দেশ্যে যাদের বেচাকেনা হতো, যাদের সেবা গ্রহণ করা হতো, সেই দাস শ্রেণিকেই বলা হয় মামলুক বা মামেলুক। অর্থাৎ মামলুক মামেলুক বলা হয় তাদেরকেই যাদের দাস হিসেবে কেনা হয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়ার জন্য। উমাইয়া শাসকদের যুগে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসলামি সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর সহযোগিতা করেছিল তুর্কি মামলিক বা দাসরা। ইমাম তাবারি রাহ. বর্ণনা করেছেন, খোরাসানের উমাইয়া গভর্নর নসর বিন সাইয়ার এক হাজার তুর্কি দাস ক্রয় করে তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে ঘোড়ায় আরোহণ করিয়ে দিয়েছিলেন। মা-ওয়ারাউন-নাহার ছিল তুর্কি দাসদের প্রধান উৎসস্থল। মামলুকরা তাদের যোগ্যতার বলে সামরিক ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। আব্বাসিদের যুগে তুর্কি দাসদের সহযোগিতা সামরিক বিভাগ ছাড়িয়ে অন্যান্য বিভাগেও ছড়িয়ে পড়েছিল। যেখানেই যুদ্ধ বিগ্রহ চলেছে সেখানেই শত্রুপক্ষ বন্দীদের বাজারে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত। তখনকার সময়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ, ককেশাস, কিপচাক, এশিয়া মাইনর, তুর্কিস্তান ও মা ওয়ারাউন নাহারে দাস বেচাকেনার বাজার বসত। বিভিন্ন যুদ্ধে বন্দী হওয়া লোকদের সেখানে বিক্রি করা হতো। সেসব দাসদের মধ্যে তুর্কি, সার্কাসিয়ান, রোমক, কুর্দি ও কিছু ইউরোপিয়ানও ছিল।
আব্বাসি খলিফা মুতাসিম বিল্লাহ সর্বপ্রথম মামলুকদের দিয়ে একটি সামরিক ইউনিট গঠন করেন এবং তাদেরকে পারসিক ও আরবদের স্থলাভিষিক্ত করেন। তার মানে মামলুকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন আব্বাসীয় খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহ এবং মামলুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মুলত নাজিমুদ্দিন আইবেক। তার হাত ধরেই মামলুকরা রাষ্ট্রের কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসে। সাজারা তুদ দুর কেও মামলুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলেন অনেকে। কে আসলে মামলুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা তা বড় কথা নয়। আইবেক মূলত শাজারা-তুদ-দুর এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই নিজেকে আরো গভীরভাবে রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে তুলে ধরতে সক্ষম হন। মামলিকরা তাদের শারিরীক দক্ষতা আর ধৈর্যের পরিচয় দিতে থাকে সব জায়গায়। সামরিক ক্ষেত্রে তাদের এত বেশি অবদান ছিল।
খলিফা মুতাসিম বিল্লাহর দাস সৈন্যসংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বাগদাদ শহর তাদের দ্বারা এমনভাবে ভরে গিয়েছিল যে, রাস্তায় মানুষের সঙ্গে তাদের ধাক্কা লেগে যেত। তাদের প্রভাবে রাজধানী বাগদাদবাসী বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল। তখন তিনি তাদের এবং অপরাপর তুর্কি দাস ও স্বাধীন শ্রেণির জন্য রাজধানী ও সেনা সদরপ্তর হিসেবে সামাররা শহর নির্মাণ করেন। খলিফা মুতাসিম বিল্লাহ পারস্য ও আরবের প্রভাব থেকে বাঁচতে সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তুর্কি দাস সেনাদের দ্বারা সমান সহযোগিতা নিয়েছিলেন। তুর্কিদের প্রতি অগাধ আস্থার কারণেই তিনি বেচাকেনা, শিক্ষাদীক্ষা, সমরপ্রস্তুতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কেননা, তাদের মধ্যে পারসিকদের মতো এত লোভ ছিল না; আবার আরবদের মতো স্বজনপ্রীতি, গোত্রপ্রীতিও ছিল না। এ মামলুক সেনাবাহিনী খুব দ্রুত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে নেয়। শেষপর্যন্ত এমন হয় যে, তারা যা চাইত তা-ই করতে পারত। খলিফা মুতাওয়াক্কিল আলাল্লাহ (মৃত্যু ২৪৭ হিজরি; ৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের হাতে একপ্রকার বন্দি হয়ে রয়েছিলেন। তারা ইচ্ছা করলে তাঁকে অপসারণ করতে পারত, ইচ্ছা করলে হত্যাও করতে পারত! এভাবেই এ মামলুকবাহিনী খলিফাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী দলে পরিণত হয়ে ওঠে অথচ আরবদের আধিপত্য বিস্তার ঠেকাতেই মামলুকদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হতো। এভাবে তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু করে দেয়। ফলে রাজধানী-কেন্দ্রিক ক্ষমতা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। যেহেতু বাহিনী ও নেতৃত্ব এখন তাদেরই হাতে ছিল, তাই স্বভাবতই আব্বাসি খেলাফতে মামলুকদের প্রভাব বেড়ে চলেছিল। বিশেষ করে তুর্কি মামলুকদের সংখ্যা। কেননা সে সময় মোঙ্গলদের তান্ডবে বিশাল বিশাল তুর্কী জনপদ শশানে পরিনত হচ্ছিল যখন-তখন।
খেলাফতের কর্তৃত্ব যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরের মনে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের বাসনা জেগে উঠতে থাকে। এতে তুর্কি সেনাবাহিনী ও এর প্রধানরা বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের জন্য খলিফাদের জন্য অস্ত্রে পরিণত হয়ে ওঠে। এভাবেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে তুর্কি মামলুকদের কদর আরও বেড়ে যায় এবং তাদের অনেকেই গভর্নর, মন্ত্রী ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে।
মূলত আব্বাসি খেলাফতের প্রথম যুগেই মামলুক শব্দটা মুসলমানদের কাছে বিশেষ এক পরিভাষায় পরিণত হয়। তখন দাস-বাজার থেকে যেসব শ্বেতাঙ্গ দাস কিনে আনা হতো তাদেরকেই মামলুক বলা হতো। তারা বিশেষ সামরিক বিভাগে কাজ করত।আব্বাসিদের দ্বিতীয় যুগে খেলাফত যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন স্বভাবতই তুর্কি দাসদের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। খেলাফত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ছোট ছোট রাজ্য যেমন : মিসরের তুলুন ও আখশিদ, খোরাসানের সাফারি ও সামানি এবং ভারতের গজনবি ও ঘুরি—সবাই নিজেদের রাজ্য শক্তিশালী করতে তুর্কি দাস কেনায় এগিয়ে আসে। মুসলিম প্রাচ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে সেলজুকদের উত্থানের ফলে তুর্কিদের প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কেননা, সেলজুকরাও মূলত তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। সেলজুক সাম্রাজ্য তুর্কি মামলুকদের ওপর আস্থা আরও বাড়িয়ে দেয়। সেলজুক সুলতান আলপ আরসালান ও মালিকশাহের প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলক তাঁর সিয়াসত নামাগ্রন্থে সেলজুক সাম্রাজ্যকে মামলুকদের শিক্ষা-সম্বন্ধীয় ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থটিতে তিনি বলেন, ‘অক্ষমতা বা প্রয়োজন ছাড়া আমাদের সহযোগিতা করা যেন মামলুকদের কাছে কষ্টকর বলে মনে না হয়। তারা যেন আমাদের তিরের নিশানায় পরিণত না হয়। তারা যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ঠিক সেভাবেই দ্রুত একত্রিত হওয়াটাও যেন শিখে নেয়। এ দাসদের ওপর যারা দায়িত্বশীল রয়েছে, তাদেরকে যেন প্রতিদিন কাজের আদেশ দেওয়ার মতো কষ্টের প্রয়োজন না পড়ে। তারা হবে পানি ও অস্ত্র বহনকারী। তারা পানীয় পরিবেশনসহ অন্যান্য কাজ করবে। বড় বড় দ্বাররক্ষী ও বড় বড় আমিরদের সেবক হবে। তাদের জন্য আবশ্যক হলো, প্রতিদিন তাদের সংখ্যা অনুপাতে প্রত্যেক ঘর থেকে যেন সেবকদের বের করে আনে। আর বিশেষ দাসদের থেকেও যেন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকে।’ এরা ছাড়াও সুলতানের জন্য থাকত প্রচুর ছোট ছোট দাস। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক ছিল শিশু-প্রহরী, কিছু ছিল নকিব বা সুলতানের হেরেমে আগমনের ঘোষক।
সেলজুক সুলতান মালিকশাহের প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলক মামলুকদের সংঘটিত করেছিলেন। মামলুকদেরই বিরাট এক বাহিনী দ্বারা তিনি নিজেকে রক্ষা করতেন। এদেরকে তাঁর নামের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে বলা হতো মামালিকে নিজামিয়া। এদের মাধ্যমে তাঁর দাপট বেড়ে যায়। নিজামুল মুলককে তুর্কি মামলুকদের প্রথম জায়গিরদাতা হিসেবে ধরা হয়।তিনি যখন সেনাবাহিনীকে নগদ টাকা পুরস্কার দেন তখন তাঁর এ দানটাই জায়গিরে রূপ নেয়। পুরস্কার গ্রহণকারীদের তিনি জমি প্রদান করেছিলেন, যা তাদের পরিচর্যা ও নির্মাণের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মাধ্যমে রাজ্যের শক্তি ও সম্পদ সংরক্ষিত থাকত। এ মামলুকদের মধ্যেই অনেকে বিভিন্ন কেল্লা ও শহর বিজয় এবং নেতৃত্ব অর্জন করেছিলেন। এঁদেরকে বলা হতো ‘আতাবেগ’।
উল্লেখ্য, উজির নিজামুল মুলকই প্রথম ব্যক্তি, যাঁকে আতাবেগ উপাধি দেওয়া হয়। সুলতান মালিকশাহ যখন ৪৬৫ হিজরিতে তাঁকে রাষ্ট্রের কাজে নিয়োগ দেন, তখনই তাঁকে এ উপাধি প্রদান করা হয়। এভাবেই সেলজুকরা তাঁদের সন্তানদের লালনপালনের জন্য বয়স্ক অনেক মামলুককে প্রাসাদে নিয়োগ দিতেন এবং তাদের এ সেবা এবং যুদ্ধের সময় সামরিক সহযোগিতার বিনিময়ে তাদেরকে বিশাল জায়গির প্রদান করতেন। আতাবেগ মামলুকরা খুব দ্রুতই এসব জায়গিরে প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছিল। বিশেষত সাম্রাজ্য যখন দুর্বল ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, তখন তারা আস্তে আস্তে নিজেদের নেতৃত্বে স্বাধীন রাষ্ট্রগঠন শুরু করে দিয়েছিল। তারা সেলজুক সাম্রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে ছোট ছোট রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।এগুলোকে আতাবেগ সাম্রাজ্য বলা হতো।
এসব আতাবেগদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন ইমাদুদ্দিন জেনগি। তিনি মসুল, আলেপ্পো ও দিয়ারে রবিয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ইমাদুদ্দিন জেনগির মৃত্যু হলে তাঁর ছেলে নুরুদ্দিন মাহমুদ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি রাজ্যকে আরও সম্প্রসারিত করেন। দামেশককেও এর অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ফাতেমি সালতানাতকে ধ্বংস করেন। মিশরে নুর উদ্দীন জেনগির পক্ষে সালাহউদ্দিন আল আইয়ুব ফাতেমি খিলাফতকে ধ্বংস করেন। ফলে মিসরও জেনকি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। নুরুদ্দিন মাহমুদ খুব বেশি পরিমাণে তুর্কি দাস কিনতে শুরু করেন। ফলে তাঁর বাহিনীতে মামলুকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। জেনকিদের পর আসে আইয়ুবিরা। তাঁরাও অধিক পরিমাণে তুর্কি দাস কিনে তাদেরকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেন। আসাদুদ্দিন শিরকুহ মিসরের দিকে যে বাহিনী পরিচালনা করেছিলেন, তাদের বড় একটি সংখ্যা ছিল মামলুক ও নুরি আমিরগণ।
সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবির মামলুকদের ‘মামালিকে সালাহিয়া’ বলা হতো, যেভাবে আসাদুদ্দিন শিরকুহের মামলুকদের ‘মামালিকে আসাদিয়া’ বলা হতো। অনুরূপ আল-মালিকুল আদিলের সময়কালের মামলুকদের ‘মামালিকে আদিলিয়া’ বলা হতো। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে আশরাফ, মুসা আদিল, কামিল ও অন্যরা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। তাঁদের মামলুকদেরকে তাঁদেরই দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে মামালিকে আশরাফিয়া, মামালিকে কামিলিয়া ইত্যাদি নামে ডাকা হতো। আইয়ুবীদের পতনকালে যখন মোঙ্গলরা মিশরের দিকে ধেঁয়ে আসছিল তখন ক্ষমতায় আসেন আরেক মামলুক দাস সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ। সাইফুদ্দিন কুতুজই ছিলেন প্রথম মামলুক সুলতান। প্রথম মামলুক সুলতান কুতুজের দাস বনে যাওয়ার কাহিনী সম্পর্কে চলুন একটু জেনে নেয়া যাক।
সাইফুদ্দিন কুতুজ যখন বালক তখন পৃথিবীতে উত্থান ঘটে দুর্ধর্ষ মঙ্গোল জাতির। তারা মুসলিম প্রাচ্যের শহর-নগরগুলোকে একের পর এক পদানত করতে থাকে। রাস্তাঘাটে চলে তাদের তাণ্ডব। তারা পুরুষদেরকে হত্যা করে নারী ও শিশুদেরকে বন্দি করে নিয়ে যেত এবং পরবর্তীতে কোনো দাস বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিত।
এমনই এক সময় তারা খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যে হামলা চালিয়ে তা দখল করে নেয়। সুলতান জালালুদ্দিন তাঁর রাজ্য, পরিবার বা আত্মীয়স্বজন কাউকেই তাতারদের থেকে রক্ষা করতে পারেননি। তাদের অনেকেই মারা যায়, অনেকেই বন্দি হয়। সেসব বন্দিদের মধ্য থেকে একটি শিশু ছিল মাহমুদ বিন মামদুদ।
তাতাররা মাহমুদের নাম দেয় 'কুতুজ' এবং এ নামেই দামেশকের দাস বাজারে তাঁকে বিক্রি করে দেয়। হাত বদল হতে হতে দামেশক থেকে কুতুজ পৌঁছে যান মিশরে।
মিশরে তখন সুলতান আলমালিকুস সালিহ নাজমুদ্দিন আইয়ুবের শাসন চলছিল। তাঁরই এক মামলুক (দাস) আমির ছিলেন ইজ্জুদ্দিন আইবেক। ইজ্জুদ্দিন আইবেক হন কুতুজের নতুন মনিব। এখানে মনিবের তত্ত্বাবধানে থেকে কুতুজ বেড়ে ওঠতে থাকেন। শিক্ষা-দীক্ষায়, ইলমে-আমলে তিনি হয়ে ওঠতে থাকেন একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
যে সময়টাতে তাতাররা খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যে হামলা চালিয়ে কুতুজকে বন্দি করে নিয়ে যায়, এর কাছাকাছি সময়েই তারা কিপচাক এলাকায় হামলা চালায় এবং সেখান থেকে রুকনুদ্দিন বাইবার্সকে বন্দি করে নিয়ে যায়। তারা বাইবার্সকেও দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়।
কাকতালীয়ভাবে বাইবার্সও হাত বদল হতে হতে মিশরে গিয়ে পৌঁছেন। মিশরের সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুবেরই আরেক মামলুক আমির ছিলেন ফারিসুদ্দিন আকতাই। বাইবার্সের নতুন মনিব হন আকতাই।
সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজের পর রুকনুদ্দিন বাইবার্স সুলতান হন। তিনিও সাইফুদ্দিন কুতুজের মতোই বীরের মতো মোঙ্গলদের মোকাবিলা করেন। পরবর্তীতে মামলুকরা বেশ কয়েকটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলে। তার মধ্যে মামলুক সালতানাত কায়রো, মামলুক সালতানাত দিল্লি, বুরজি রাজবংশ, রাহরি বা বাহরিয়া রাজবংশ অন্যতম।
লেখকঃ- উমায়ের হাদি
- মামলুক সালতানাত এর প্রতিষ্ঠাতা কে
- মামলুক সালতানাত এর প্রতিষ্ঠাতা
- mamluk saltanat
- দিল্লির মামলুক সালতানাত
- mamluk sultanate
- mamluk sultanate india
- mamluk sultanate leaders
- mamluk sultanate definition
কোন মন্তব্য নেই: