সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ~ ইসলাম পরিচয়

 সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি রাহি:


কালের চক্রে পৃথিবীর বুকে আর্বিভূত হয় এমন অনেক মহাবীর, যাদের নাম ইতিহাসে লেখা হয় স্বর্ণাক্ষরে। তারা নিজ কর্ম আর কঠোর অধ্যাবসায় দ্বারা নিজেকে করে যান অমর-অবিনশ্বর।


নিজের কর্মের দ্বারা কালের চক্রে নিজের নাম অঙ্কিত করা হয়ত সম্ভব।কিন্তু জগতের কোনো শক্তির দ্বারাই দেহের বিনাশকে রোধকরা সম্ভব নয়।সেই মহাসত্যকেই চরম ভাবে উপলব্ধি করছেন দামেস্কের সুরম্য প্রাসাদের কামরায় শুয়ে থাকা এক ব্যাক্তি।


তিনি আর কেউ নন তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালি ব্যাক্তি, জেরুজালেম ফাতিহ মাহাবীর সুলতান গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ূবি (রহ.)।


দামেস্ক প্রাসাদে শুয়ে আছেন তিনি। তিনি অনুভব করতে পারছেন তার শরীরে তীব্র বিষক্রিয়া চলছে। তিনি গত রাতে যে শরবত পান করেছিলেন সম্ভবত বিষটা তার থেকেই এসেছে। তিনি তার দেহরক্ষীকে কাছে ডাকলেন, বললেন, তাকিয়ে দেখো তো আমার মুখে কি তীব্র যন্ত্রনা ও অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠছে???রক্ষী নতমস্তকে দাড়িয়ে রইল। সুলতান আশ্বাস দিলেন ভয় নেই সত্য বলো।


রক্ষী বলল, আপনার কথা ঠিক, আপনার চেহারায় এখন তীব্র যন্ত্রনা আর অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। সুলতান বললেন এটা বিষের প্রভাব।আমি এই চেহারা চিনি। বহুবছর আগে এই চেহারা আমি আরো একবার দেখেছিলাম। রক্ষী বিষের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো। সে চিৎকার শুরু করল।


তার চিৎকারে প্রাসাদের সকলে ছুটে এলো।হেকিমকে খবর দেয়া হলো।হেকিম এসে সুলতানকে পরীক্ষা করে মাথা নিচু করে ফেললেন। সুলতান কষ্ট করে হলেও ম্লানভাবে হাসি দিলেন, বললেন আমি জানি এই বিষের চিকিৎসা তোমার কাছে নেই। আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। বেশি হলে আর কয়েকটি প্রহর মাত্র আমার সময় আছে। হেকিম অবাক চোখে তাকাল, কেননা বিজ্ঞ চিকিৎসকরাও এভাবে বর্ননা দিতে পারেনা। অথচ সুলতান তা অবলীলায় বলে দিলেন। লজ্জিত মুখে হেকিম প্রস্থান করল।


সুলতান তার রক্ষীদের একটি আয়না নিয়ে আসতে আদেশ দিলেন। অল্প সময়েই তা নিয়ে আসা হলো।

এবার সুলতান নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে অবাক হলেন,তার চেহারায় তীব্র অনুতাপ ফুটে উঠল। তিনি আয়নায় তাকিয়ে যেনো নিজেকে নয় অন্য কারো প্রতিচ্ছায়া মনে হচ্ছিলো।


সুলতান বললেন "আমি চিরকাল আল্লাহর জমিনে তার ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছি। ক্রুসেডরদের হাত থেকে জেরুজালেমকে মুক্ত করেছি। হাত্তিনে তাদের অহংকার গুরিয়ে দিয়েছি। আপনার সাথে এক মূহুর্তের জন্যও বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আপনার পুত্রের সাথে অবিচার করিনি, খলিফাকে অমান্য করিনি। আপনার আদেশকেও অবজ্ঞা করিনি। এবার আমার সময় এসেছে আমিও আপনার কাছে আসছি। 


এতক্ষণ সুলতানের চেহারায় প্রশান্তি লক্ষ করা গিয়েছিলো,কিন্তু হঠাৎ তার চেহারায় ভয় আর আতঙ্ক ফুটে উঠলো।


তিনি আবার বলে চললেন,আমায় ক্ষমা করুন আমি আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা, আমি আমির নুরুদ্দিন আর খলিফার অনুগত ছিলাম তাই আমাকে এটা করতে হয়েছে। আমি নিজের জন্য আপনার শাসন উচ্ছেদ করিনি। আমি কেবল খলিফার আনুগত্য রক্ষার খাতিরেই এই কাজ করেছি। আমায় আমার আমীর নুরুদ্দিনের কাছে যেতে দিন। আমি তার সাথে মিলিত হতে চাই। দয়া করে পথ থেকে সরে দাড়ান আমায় একা করে দেবেন না। আমি এভাবে পৃথীবী ছাড়তে চাইনা।


এমনি করুন আর্তনাদ করছিলেন সুলতান। তার সেই আর্তনাদে কি ঐ ব্যাক্তির হৃদয় গলেছিলো? তা জানা যায়নি। ফজরের আগেই ইহলোক ত্যাগ করলেন সুলতান।


খসে গেল আরেকটি নক্ষত্র...............

© সংগ্রীহিত 


#সোর্স

* মহাবীর সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি ( ড.আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি) 

* আয়ূবীদের ইতিহাস(ড.নিহাল মুহাম্মদ)

*ক্রুসেডের উত্থান পতন(ড.ফারদিন মুহাম্মদ)



হাদীস শাস্ত্রে প্রাচ্যবিদ দের অবদান


কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.