খলীফা আবদুল হামীদ
মহৎহৃদয় খলীফা নাদের আগা। তিনি ছিলেন উসমানী খলীফা আবদুল হামীদ (২য়). খাস খাদেম। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, -একজন গরীব লােক। ইস্তাম্বুলের এক সরকারী দপ্তরে সামান্য বেতনে চাকুরি করতাে। বেতনের টাকা দিয়ে কোন রকমে পরিবারের খাওয়াটা পরাটা চলে যেত। বিয়ে করার পর দপ্তরে জানানাে হয়নি। তাহলে হয়তাে বেতন বাড়তাে। ঘরে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। হাতে বাড়তি কোনও টাকাকড়ি নেই। এদিকে কনকনে শীত । ঘরের অবস্থা নড়বড়ে। শীত মানে না। এক রাতে প্রসব বেদনা উঠলে। ধাত্রী অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলো না। দ্রুত ডাক্তার ডাকা প্রয়ােজন। কিন্তু হাত যে খালি! মাথায় একটা অসম্ভব বুদ্ধি এল, খলীফাকে টেলিগ্রাম পাঠানাে যায়। বলা তাে যায় না, কিছু হলেও হতে পারে। আগপিছ না ভেবে, নিকটস্থ পােস্টাপিসে গিয়ে তাই করলো । ভাগ্যক্রমে সেদিন খলীফা অনেক রাত হলেও দপ্তরে বসে মুনশিকে দিয়ে একটা চিঠি লেখাচ্ছিলেন। টেলিগ্রামটা অন্যমনস্কভাবে হাতে নিয়ে পড়লেন। পড়া শেষ করেই ভীষণ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি (নাদের আগা) পাশেই শরবতের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখলাম খলীফা দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে । তিনি আফসােস করে বলছেন, -হায়! রবের কাছে আমি কী জবাব দেব! প্রজাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের যথাযথ ব্যবস্থা করতে পারছি না। আমার অবহেলার কারণেই আজ একটা অসহায় মেয়ে প্রসব বেদনায় ছটফট করছে! আচনক পায়চারী থামিয়ে হুংকার দিয়ে বললেন, -নাদের! এক্ষুণি প্রাসাদের এম্বুলেন্স বের করে। সাথে করে আমার ডাক্তারকেও নিয়ে যাও। কয়েকজন নার্স-ধাত্রী নিতেও ভুলাে না। আর শােন! যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতিটা আমাকে জানাবে । তৎক্ষণাত ডাক্তার বাসেম ওমর আর প্রাসাদ-পরিচালক জামীল পাশাকে নিয়ে আমি ছুটলাম। আল্লাহর রহমতে সবকিছু ঠিকঠাক মতাে সমাধা হলাে। ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় শেষের দিকে। ফজরের আজানের আর বেশি দেরী নেই। আমি মহলে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখি খলীফা তখনাে আমার জন্যে অধীর হয়ে অপেক্ষা করছেন। সারা রাতের নিঘুমজনিত ক্লান্তি তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল । চেহারায় ভীষণ দুশ্চিন্তার চাপ । আমাকে দেখেই ব্যগ্রস্বরে খবর জানতে চাইলেন । বললাম, -আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু সুন্দর মতাে সম্পন্ন হয়েছে। আল্লাহ তাআলা লােকটাকে একটা পুত্রসন্তান দান করেছেন। কৃতজ্ঞ পিতা ছেলের নাম রেখেছে 'আবদুল হামীদ। বাবা-মা দুজনেই আপনার মহানুভবতা আপ্লুত। আমরা আসার সময় দু'জনেই কাঁদছিল আর আপনার জন্যে দুআ করছিল। আমার কথা শুনে খলীফার চেহারা পূর্ণিমার চাদের মতাে উজ্জল হয়ে উঠলাে । খলীফা আবদুল হামীদ হলেন শ্রেষ্ঠ উসমানি খলীফাদের একজন। তিনিই প্রথম ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন । এজন্য ইউরােপীয় শক্তি তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিল। ইহুদি প্রচারমাধ্যম তাকে অত্যন্ত খারাপভাবে চিত্রিত করতে শুরু করেছিল । তিনি আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে, আজ মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ভিন্ন হতাে। তুরস্কে কামালের মতাে শয়তানের দোসরদের জন্ম নেয়ার ফুরসৎ মিলতাে না। ইসরাঈলের মতাে অবৈধ রাষ্ট্রের গােড়াপত্তন হতে পারতাে না। অনেক কিছুই হতে পারতাে না এবং আরও অনেক কিছুই হতাে। এই মহান খলীফার নাকি কখনাে তাহাজ্জদ কাযা হতাে না। আর আমরা? (শায়খ মুহাম্মাদ আতিকুল্লাহ কর্তৃক লিখিত ইতিহাসের স্বর্ণবিন্দু বই থেকে নেওয়া ।)
কোন মন্তব্য নেই: