ইসলামের অর্থনৈতিক চিন্তাধারা ~ ইসলাম পরিচয়


*।। ইসলামের অর্থনৈতিক চিন্তাধারা ।।*


ইসলামের অর্থনীতি যে দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তা হলো মহান আল্লাহর কিতাব আল-কুরআন এবং রাসূল (সঃ) -এর সুন্নাহ। পরবর্তীকালে যে সমস্ত মুসলিম চিন্তাবিদগণ ইজমা এবং কিয়াসের ভিত্তিতে অর্থনীতির পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করেছেন তা কিন্তু কুরআন এবং সুন্নাহর বুনিয়াদি ধারণাকে অক্ষুণ্ণ রেখে।


ইসলামের প্রাথমিক যুগে যে সব চিন্তাবিদরা ইসলামী অর্থনীতি বিকাশে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম গাজ্জালী, ইবনে at, ইবনে খালদুন, আল-ফারাবী, ইবনে সীনা, ইবনে তাইমিয়া, আল-মাওয়াদি, নাসিরউদ্দিন আল-তুসী প্রমুখ।


*★ ইমাম আবু ইউসুফ:-* ইমাম আবু ইউসুফ ছিলেন ইমাম আবু হানিফার ছাত্র এবং আব্বাসী খলীফা হারুনূর রশীদের প্রধান উযীর। এছাড়া প্রধান আইন বিশেষজ্ঞ। তিনি ‘কিতাবুল খারাজ’ (Book of Taxation) নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি আয়কর (Tax), জনসাধারণের অর্থায়ন (Public Finance), কৃষিজ উৎপাদন ( Agricultural Product) ইত্যাদির উপর নিজস্ব ধারণা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর ধারণা মতে নির্দিষ্ট খাজনা (Fixed Tax) -এর চেয়ে আনুপাতিক খাজনা ( Proportional Tax) কৃষকদের অনুপ্রেরণা হিসাবে কার্যকরী ভূমিকা নেবে। এতে কৃষকরা অকর্ষিত জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করবে। তিনি আয়কর মকুফ নীতির সপক্ষে ছিলেন। কেননা এই নীতি উৎপাদনকারীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। তিনি দুর্নীতি কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় আয়কর বিভাগ স্থাপনের পক্ষে ছিলেন।


আবু ইউসুফ আয়কর রাজস্বকে আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নের সপক্ষে ছিলেন। এই প্রেক্ষিতে তিনি তাঁর গ্রন্থে বিভিন্নধরনের খাজনার কথা বলেছেন। যেমন- বিক্রয় কর (Sale Tax), মৃত্যু কর (Death Tax), আমদানি শুল্ক (Import Tax) ইত্যাদি।


*Continue...**Continue...*


মুসলিম বিশ্বের স্বর্ণযুগে (৮ থেকে ১৩ শতাব্দী) প্রত্যেক অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক বিকাশ, কার্যকলাপ এবং ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের উপর এই স্বর্ণযুগের প্রশংসা জ্ঞাপন করেছেন।


*★ ইবনে মিসকাওয়াহ:-* পারসিয়ান অর্থনীতিবিদ ইবনে মিসকাওয়াহ বলেছেন যে, “ঋণ গ্রহীতার যতটা আগ্রহ থাকে ঋণ দাতার উপর, তার থেকে বেশি আগ্রহ থাকে ঋণ গ্রহীতার উপর। কেননা তার সুস্থতার উপর ঋণ পরিশোধের ব্যাপারটা নির্ভর করছে। তাই এই ভালোবাসা স্বার্থ কেন্দ্রীক, নির্মল ভালোবাসা নয়।”


*★ বাজার দর হ্রাস-বৃদ্ধি (Market Mechanism):-*

এ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া বলেন- “কোনো একটা দ্রব্যের প্রতি যদি জনসাধারণের চাহিদা থাকে কিন্তু সেই দ্রব্যের জোগান বাজারে কম থাকে তবে সেই দ্রব্যের মূল্যের বৃদ্ধি ঘটবে। আর যদি বিপরীত হয় অর্থাৎ, দ্রব্যের জোগান বেশি কিন্তু জনসাধারণের চাহিদা কম তাহলে দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পাবে।”


*★ ইমাম গাজ্জালী (রহঃ):-* ইমাম গাজ্জালীর মতে, “অর্থবিদ্যা এমনই একটা বিজ্ঞান যা ধর্ম, দর্শন, নীতি বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের সাথে জড়িত। ইমাম গাজ্জালী দেখিয়েছেন কতগুলি দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী মূল্য বৃদ্ধি হয় না।”


*★ ইবনে খালদুন:-* ইবনে খালদুন আধুনিক অর্থনীতিবিদেদের অগ্রগামী ছিলেন, তিনি তাঁর বিখ্যাত মুকাদ্দামাতে Assabiyah বা Social Cohesion বা সামাজিক ঐক্য সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। কোনো সভ্যতার উত্থান-পতন ঐ সামাজিক ঐক্যের উপর নির্ভর করে। সামাজিক ঐক্য যত দৃঢ় হবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও তত জোরালো হবে। বৃদ্ধি এবং উন্নতি ( Growth and Development) যথার্থ উত্তেজিত করে জোগান এবং চাহিদাকে। আর এই জোগান এবং চাহিদার উপর নির্ভর করছে কোনো বস্তুর মূল্য ও মান কত।


বাস্তবিক পক্ষে ইবনে খালদুন দেখিয়েছেন যে জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পদের সরাসরি সংযোগ রয়েছে।


*----------সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.