মাদাগাস্কারে ইসলামঃ ইতিহাস ও সংস্কৃতির খোঁজে ~ ইসলাম পরিচয়

 মাদাগাস্কারে ইসলামঃ ইতিহাস ও সংস্কৃতির খোঁজে

—————————————————

আফ্রিকার দক্ষিণপূর্ব উপকূলে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ রাষ্ট্র - মাদাগাস্কার। জীববৈচিত্রে ভিন্নতা অনুসারে পৃথিবীর ১৭টি বৈচিত্রময় দেশের অন্যতম এ দেশটিতে মানব বসতি গড়ে উঠেছে আনুমানিক ৩৫০ থেকে ৫৫০ সালের মধ্যে বর্তমান ইন্দোনেশিয়দের কল্যাণে। নিজস্ব সমৃদ্ধ বাস্তু-সংস্থানের কারণে বর্তমানে পৃথিবীর ৮ম মহাদেশ খ্যাত এই অঞ্চলটি ৭ম শতকেই আরব ও পারসিক বণিকদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। তখন থেকেই এই অঞ্চলে "এ্যান্তেমোরো", "এ্যান্তেলাউত্রা" ও "জাফি রামিনিয়া"র মতো শক্তিশালী মুসলিম গোত্র প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে। যারা ইসলামী খেলাফতের আদলে এ দ্বীপটিতে উন্নত কৃষি, অর্থনীতিসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে। 

মাদাগাস্কার


পরবর্তীতে ১৬ থেকে ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত দ্বীপটির "কিংডম অব অ্যামিরিনা"র অন্তর্ভুক্তি ও ১৮৯৬ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এখানে ফরাসি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত থাকলেও আজকের মাদাগাস্কারের ভ্যানিলা, লবঙ্গ, কফি, চিংড়ি ও নীলকান্তমনি (পাথর) সরবরাহে বিশ্বে শ্রেষ্ঠ অবস্থানে থাকার পেছনে ১৫ শতক পূর্ব প্রতিষ্ঠিত মুসলিম গোত্রগুলোর উন্নত কৃষি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভূমিকা অনস্বীকার্য। 


**ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ;

মাদাগাস্কারে ইসলামের সুবিশাল ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া যায়। ৭ম/৮ম শতাব্দীর দিকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল ও ইয়ামেনের হাদারামাউত থেকে বণিকগন 'বাণিজ্যিক কেন্দ্র' স্থাপনের জন্য ম্যাদাগাস্কারে যাতায়াত শুরু করেন।

প্রত্নতাত্ত্বিক নজির অনুযায়ী, বিশেষ করে দ্বীপটির দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে বহু পাথর ও প্রবালের তৈরী মসজিদের দেখা মেলে। উল্লেখ্য, এই দক্ষিণ পূর্ব উপকূল দিয়েই ৮ম শতাব্দির প্রারম্ভে ইসলাম পৌছাতে শুরু করে। তবে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম হিজরি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়েই এই অঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। 

১ম আরব ভূগোলবীদ হিসেবে ১ম আরব ভূগোলবীদ হিসেবে "মাস্টার অব জিওগ্রাফি" খ্যাত আল ইদরিসি (১১০০-১১৬৫) সর্বপ্রথম এ দ্বীপটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন।

মাদাগাস্কারে ইসলামের ইতিহাসকে ঐশ্বর্যময় করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনকারী স্থানীয় শক্তিশালি গোত্রগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বর্ণনা করা হলো-

এ্যান্তেমোরো (The Antemoro)-

মাদাগাস্কারের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে প্রাচীন ইসলামী ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান গোত্র হিসেবে এ্যান্তেমোরোর নাম উঠে আসে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী গোত্রটির অন্যতম প্রধান দুজন পূর্বপুরুষ "র‍্যামাকারোরো" (Ramakaroro) ও "র‍্যামাকারূব" (Ramakarube) এর মাধ্যমে গোত্রটি ৭ম শতকেই ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে। যাদের পিতা মক্কা থেকে অত্র অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং কি হিজাজের রাজনৈতিক আন্দোলনেও তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।


এ্যান্তেলাউত্রা (The Antalaotra)


মাদাগাস্কারের উত্তর পশ্চিম উপকূলে এ্যান্তেলাউত্রা গোত্রের অবস্থান ছিল। তারাও ৭ম/৮ম শতকের দিকেই ইসলামের ছায়াতলে এসেছিল বলে জানা যায়। 

গোত্রটির নাম শুনেই ধারণা করা যায়, তারা কোন সমুদ্রবর্তী অঞ্চল থেকে এ দ্বীপটিতে বসতি স্থাপন করেছিল। মূলত ১০ম শতকের প্রারম্ভে কমোরোসের কিউলা ভায়া অঞ্চল থেকে তারা মাদাগাস্কারে আসেন। তবে গোত্রটির লোকবল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরব, আফ্রিকান ও ম্যালাগেসি রক্তের মিশ্রণ লক্ষ্যণীয়।

বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে - এ্যান্তেলাউত্রা গোত্রের লোকেরা মূলত সুন্নী মুসলিম ছিলেন এবং জ্ঞানগত ক্ষেত্রে অন্যান্য গোত্রগুলোর চেয়ে তারা অধিকতর সমৃদ্ধশালী ছিলেন।

পর্তুগিজদের লিখনি অনুযায়ী, পর্তুগিজদের লিখনি অনুযায়ী, ১৫ শতকে তারা মাদাগাস্কারে গিয়ে এ্যান্তেলাউত্রা গোত্রকে একটি সমৃদ্ধশালী মুসলিম গোত্র হিসেবে আবিষ্কার করেছিল। তবে পর্তুগিজদের উপস্থিতি দ্বীপটির আরব বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল এবং সাথে সাথে ইসলামি রাষ্ট্র গুলোর সাথেও যোগাযোগের বিচ্ছেদ ঘটতে থাকে তখন থেকেই। 

পরবর্তীকালে দ্বীপটির সাথে ইউরোপের ব্যাবসায়ী সম্পর্ক উন্নত হতে থাকে, এমনকি সেই অঞ্চলে ব্যাবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয়গন এ্যান্তেলাউত্রা গোত্রকেই মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করতো বলে জানা যায়। 

১৭ শতকের দিকে মাদাগাস্কারে বহুসংখ্যক ফরাসিসহ ইউরোপীয়দের প্রচুর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। যার প্রেক্ষিতে এ্যান্তেলাউত্রাগন মারাত্মক নিপিড়ন ও হত্যাযজ্ঞের স্বীকার হতে থাকে। এমনকি দ্বীপটির দক্ষিণ উপকূলেই জাফি রামিনিয়া সহ বহু স্থানীয় গোত্রের মাধ্যমে এ্যান্তেলাউত্রাদের নির্যাতিত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। (জাফি রামিনিয়া যদিও অন্যতম এক খ্যাত মুসলিম গোত্র ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কিছু অংশ ধর্মান্তরিতও হয়ে যায়)

লক্ষণীয়, গোত্রটির এহেন নিপিড়নের নজীর থাকা সত্ত্বেও ১৮২৫ সালে "মেরিনা" গোত্রের উত্থানের পূর্ব পর্যন্তও এ্যান্তেলাউত্রা যথেষ্ট রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে বসবাস করতো। 

তবে এ্যান্তেলাউত্রার রাজনৈতিক পতনের পরও তারা মুসলিম ভূখণ্ড গুলোর সাথে গোপনে যোগাযোগ সচল রেখে দ্বীপটিতে ধর্মতাত্ত্বিক বয়ানকে সামনে রেখে অন্যান্য গোত্র গুলোকেও পুনরায় উজ্জীবিত করার চেষ্টা করতে থাকে। 

১৮২২ সাল পরবর্তী সাভাকা গোত্র সমূহের নতুন করে ইসলামাইজেশন যার সাক্ষ্য বহন করে।


জাফি রামিনিয়া ( the Zafi Raminia )


জাফি রামিনিয়া গোত্রে কোন এক পূর্ব পুরুষ ইসলামের প্রাথমিকযুগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। দ্বীপটিতে জাফি রামিনিয়া গোত্রের বেশ পূর্বে বসতি স্থাপনকারী "রামীনি" বংশধরদের দাবী অনুযায়ী - তাদের মাধ্যমেই জাফি রামিনিয়া গোত্র মাদাগাস্কার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছিলো। যারা হেজাজে নিজেদের প্রতিকূল অবস্থার প্রেক্ষিতে অত্র অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং মানাজারীর কাছাকাছি কোন অঞ্চলে স্থায়ী হন। 


জাফি রামিনিয়া গোত্রের দাবী অনুযায়ী -

রাসূল (সাঃ) এর বংশের সাথে তাদের গোত্রের ৯ম পূর্ব পুরুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। 

অঞ্চলটিতে আরবদের আগমনের প্রারম্ভে তারা নিজেদের "জাফি ইব্রাহিম" বলে উল্লেখ করতো, যাদের "নসি ইব্রাহিম বলেও ডাকা হতো। 

বর্তমানে তারা ভোহিপেনোর পূর্ব উপকূলে " নসি বোরহা" নামে পরিচিত। 

তারা মনে করে, তারা সম্পূর্ণরূপেই ম্যালাগেসি সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত।

সাকালাভা (The Sakalava)

সাকালাভা গোত্রের লোকেরা সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে মোজাম্বিক থেকে আসা আদিবাসি মুসলিম নৃগোষ্ঠীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। 

পরবর্তীতে ১৮২২ সালে সাকালাভা গোত্রের প্রধান "এ্যান্ড্রিয়েন্টোলি"-র মুসলিম হওয়ার খবর পাওয়া যায়।


ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাবঃ


প্রাচীন আরব ব্যাবসায়ীগণ স্পষ্টতই আফ্রিকার সাথে ইসলামের সংযোগ রক্ষা করে আসছিলেন। ৮ম শতাব্দী থেকেই মুসলিম অভিবাসী ও ব্যাবসায়ীদের মাধ্যমে মাদাগাস্কারে ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষনীয়। ঐশ্বরিক তত্ত্ব অনুশীলন, স্থানীয় শ্রেণি বা এ্যান্তেমোরোর পুঁথিতেও যার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। 

যেমন- ombiasy শব্দটির ব্যবহার ম্যাদাকাস্কারে পূর্ব থেকেই বিদ্যমান, এছাড়াও তাকদিরে বিশ্বাস (vitam) বা ody (Talisman) পরিভাষা গুলোর ব্যাপক ব্যাবহার লক্ষনীয়। 

এবং কি ম্যালাগেসি ভাষার ৯০ ভাগ মৌলিক শব্দইএবং কি ম্যালাগেসি ভাষার ৯০ ভাগ মৌলিক শব্দই ইন্দোনেশিয় ও আরবী পরিভাষা সমূহ হতে গৃহীত। 

যে প্রভাবটি স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে এ্যান্তেমোরো গোত্রের "সোরাবে" (sorabe, যার অর্থ- মহান শাস্ত্র) সংরক্ষিত নথী সমূহ আরবী ভাষা থেকেই গৃহীত হয়েছে। যেখানে আরবী অভিব্যক্তিসহ প্রার্থনা ও কিছু ঐন্দ্রজালিক লেখনীরও অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়।

বর্তমানেও ম্যালাগেসিগন এ্যান্তেমোরো ও এ্যান্তেলাউত্রার উৎপত্তি ও তাদের জ্যোতিষশাস্ত্র, ভূ-মানব বিজ্ঞান ও ঔষধ এর মিশ্রণ নিয়ে কাজ করে যা মাদাগাস্কারে ইসলামী জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের ঐতিহাসিক দলিল। 

দ্বীপটির দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে এখনও আরবি পরিভাষা সমূহের অধিক ব্যাবহার লক্ষণীয়, কেননা অঞ্চলটিতে এখনও আরব ব্যাবসায়ীদের খুঁজে পাওয়া বিশ্ময়কর কিছু নয়। 

যেমন- Sokany (Ar. Sukkan= Rudder), Mizana (Ar. Mizan = Scale) ইত্যাদি। 

সাথে সাথে সপ্তাহ ও দিনের নামের ক্ষেত্রেও, যেমন-

Asabotsy (Sabt-শনিবার), Atalata (Thalatha-তিন) ইত্যাদি। 

এছাড়াও জ্যোতিষশাস্ত্র, পাটিগণিত, ঐশ্বরিক পরিভাষা, কলা-পোশাক, সঙ্গীত ইত্যাদিও আরবী পরিভাষা সমূহের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে।

কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের দাবী অনুযায়ী, ম্যালাগেসি পুরুষদের খতনা (circumcision) বিদ্যমান থাকা আরবমূলের দিলেই ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু এই রীতির প্রচলন মাদাগাস্কারে আরব বসতি স্থাপনের বেশ আগ থেকেই শুরু হয়েছিল। ধারণা করা হয়, এই রীতি (circumcision) "মেরিনা" নামক গোত্র হতে শুরু হয়েছিল, যারা সেই অঞ্চলে ইসলাম আগমনের প্রারম্ভেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। 

মাদাগাস্কারে ইসলামী সংস্কৃতির আরেকটি দিক হলো- পিতৃগোত্রজ ব্যাবস্থা (patrilineal system) যেখানে ইসলাম আগমন পূর্ব সময়ে মাতৃকূল ভিত্তিক (Matrilineal) সমাজ লক্ষ্য করা যেত।

তবে মাদাগাস্কারের পূর্ব উপকূলের কিছু অঞ্চলে আরবদের পদচিহ্ন থাকলেও ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাব তুলনামূলক কম। সম্প্রতি সময় পর্যন্তও এ অঞ্চলের লোকদের মধ্যে আল্লাহ নাম, মসজিদ, নামাজ, তীর্থযাত্রা (হজ্জ) সহ ইসলামের কেন্দ্রীয় পরিভাষা সমূহ সম্পের্কে তেমন জ্ঞান ছিলোনা।

দ্বীপটির উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে এ্যান্তেলাউত্রা গোত্রের ব্যাবসায়ীগণ গরুর মাংস, কচ্ছপের খোসা ও মধু সরবরাহ করতেন। যারা স্থানীয়দের কাছে ইহরানীয়ান হিসেবে বিবেচিত হতো। ওনজাতসি (Onjatsy) ছিল তাদের একমাত্র অবশিষ্টাংশ। (ওনজাতসি প্রায় ১০ হাজার জনসংখ্যার একটি ছোট গোত্রের নাম ছিল, যারা ক্যাপ ডি'আম্রে ও আম্পানোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতো। যারা তাদের পূর্বপুরুষ "দারাফী" এর মাধ্যমে প্রাচীন আরব মুসলিম বংশদ্ভূত বলে দাবী করে থাকেন।)

এই ওনজাতসিদের ই একটি অংশ যারা "মানানজারী" ও "মাতিতিন" নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বাস করতো, ১৯২৯ সালে তারা ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে ও "এ্যাঞ্জাওটি" (Anjaoty) গোত্রের বংশধর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

উনবিংশ শতাব্দীর দিকে এ্যানোরন্টসঙ্গানা'র (municipality in Madagascar at present) মুসলিমদের শুষ্ক খড় কুটা দিয়ে মসজিদ বানাতে দেখা যেত। বিংশ শতাব্দীতে উত্তর পশ্চিম উপকূলের মুসলিমরা তাঁবু দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করতো যেখানে নবী রাসূলগনের নানা ঘটনার বর্ণনা বাধাই করে টাঙিয়ে রাখা হতো।

সাম্প্রতিক এ্যাথনোগ্রাফি অনুযায়ী, বর্তমানে মাদাগাস্কারে মুসলিম প্রত্নতাত্ত্বিকতার চেয়ে তথাকথিত "ইসলামিস" এর সংখ্যাই অধিক। যেমন- এ্যান্টালোটসি, আন্ত্ববাহোয়াক বা এ্যান্তেমোরো গোত্রের লোকজন যাদের পোশাক পরিচ্ছেদে পাগড়ী বা সোরবে থাকলেও তারা কুরআন জানেনা, যথেষ্ট ইবাদতগাহ নেই, এবং তারা সোহালি ভাষা চর্চাতেও তেমন অভ্যস্ত নয়।


যদিও ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ইসলাম প্রাসঙ্গিক সংস্কৃতি একথার স্বীকৃতি দেয় যে মাদাগাস্কারে ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। কিন্তু বর্তমানে তার সিংভাগই অনুপস্থিত। পর্তুগিজ প্রভাব, ফরাসি উপনিবেশ, মুসলিম দেশ সমুহ থেকে ভৌগলিক দূর অবস্থান এবং বিশেষ করে নানা জাতের নতুন বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করণ ইত্যাদি দিক সমূহকেই ম্যাদাগাস্কারের বর্তমান প্রাসঙ্গিকতায় ইসলামের দূরাবস্থার মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞগণ আখ্যায়িত করেছেন। 

তবে মাদাগাস্কারে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রভাব কোন নতুন ঘটনা নয়। একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও শক্তিশালী সাংস্কৃতিক প্রভাব দ্বীপটিতে লক্ষ্যণীয়। যেমনিভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী দ্বীপটির সাথে মুসলিমদের সংযোগ স্থাপন, শক্তিশালি বাণিজ্যিক ঘাটিতে পরিণত করার মাধ্যমে উন্নত অর্থনীতি উপহার দিয়েছিল মুসলিমরা, একই সাথে অত্র অঞ্চলে শত শত মুসলিম গোত্রের স্থায়ী বসতি স্থাপনের মাধ্যমে ইসলামের আদালতপূর্ণ ব্যাবস্থার ছোঁয়া থেকেও বঞ্চিত হয়নি ৫ লক্ষ ৮৭ হাজার বর্গমাইলের এই জীববৈচিত্রময় অঞ্চলটি।


 সংকলক- মুশফিকুর রহমান

মুসলিম পোর্ট

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.