*ইলতুৎমিস*
ইলতুৎমিস ছিলেন ভারতের উপমহাদেশের প্রকৃত প্রতিষ্টাতা। তিনি তুর্কিস্তানে ইলবারি গোত্রের ইয়ানাম খানের পুত্র। তাঁর শারীরিক সৌন্দর্য ও প্রতিভার জন্যে তাঁর ভাইসকল চক্রান্ত করে কোনো এক ব্যাবসায়ীর নিকট তাঁকে বিক্রিত করেন। কুতুবুদ্দিন ইলতুৎমিসের সৌন্দর্য ও গুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ক্রয় করেন। তাঁর কর্ম দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দাস থেকে মুক্ত করেন এবং নিজ কন্যার সাথে বিবাহ দেন। ইলতুৎমিস প্রথমে গোয়ালিওর এবং পরে গদায়নের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর দত্তক পুত্র আরাম শাহের অকর্মন্নতায় সাম্রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। আমির উমরাহরা ইলতুৎমিসকে সমার্থন করেন। তিনি আরাম শাহকে পরাজিত করে ১২১১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সুলতান হন। ইলতুৎমিস ১২১১ থেকে ১২৩৬ পর্যন্ত রাজত্বকালের মধ্যে ১২১১ থেকে ১২২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যাস্ত ছিলেন বিদ্রোহীদের দমন করতে। ১২২০ থেকে ১২২৭ পর্যন্ত মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে, ১২২৭ থেকে ১২৩৬ পর্যন্ত সময় কাটান সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করতে।
ইলতুৎমিস যখন সিংহাসনে বসেন তখন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা যায়। বিদ্রোহ গুলি হলো –
১) আমিরদের বিদ্রোহ দমনঃ- গজনীর শাসক তাজউদ্দিন ইলদিজ নিজেকে মুহাম্মদ ঘুরির উত্তরাধিকার মনে করে দিল্লি অধিকারের চেষ্টা করেন। ইলদিজ গজনী থেকে বিতাড়িত হয়ে পাঞ্জাব থেকে থামেশ্বর পর্যন্ত এলাকা দখল করে বসে। ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে ইলতুৎমিস তাকে পরাজিত নিহত করে।
২) উচ ও মুলতানের শাসনকর্তা নাসিরউদ্দিন কুবাচা স্বাধিনতা ঘোষণা করলে ১২১৭ খ্রিস্টাব্দে ইলতুৎমিস তাকে পরাজিত করে লাহোর হইতে বিতাড়িত করে। ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে কুবাচা পুনরায় বিদ্রোহী হলে ইলতুৎমিস তাকে চুড়ান্তভাবে পরাজিত করে সিন্ধু দেশ দিল্লির অধিনে আনেন।
কুতুবউদ্দিন আইবেকের মৃত্যুর পর থেকে বঙ্গদেশ দিল্লির প্রভুত্ব মানতে অস্বীকার করে। বাংলার শাসক আলাউদ্দিন আলি মার্দান খিলজি বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাকে হিসামউদ্দিন খিলজি হত্যা করে নিজেকে গিয়াসউদ্দিন খিলজির নাম নিয়ে স্বাধীনভাবে বাংলার সিংহাসনে বসে। ইলতুৎমিসের পুত্র নুরউদ্দিন তাকে নিহত করেন। এরপর বল্কা খলজি বাংলার সিংহাসনে স্বাধীনভাবে বসার চেষ্টা করলে ইলতুৎমিস তাঁকে নিহত করেন এবং বাংলায় সুলতানি শাসন প্রতিষ্টিত করেন।
১২২১ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খান এক বিশাল মোঙ্গল বাহিনী নিয়ে খাওয়ারিজিম রাজ্যের রাজধানী খিবা আক্রমণ করেন। সেখানকার শাসক জালালউদ্দিন পালিয়ে গিয়ে পাঞ্জাবে উপস্থিত হন এবং ইলতুৎমিসের কাছে আশ্রয় চান। চেঙ্গিস খান জালালুদ্দিনকে অনুসরণ করে পাঞ্জাব আসেন। কূটকৌশলী ইলতুৎমিস চেঙ্গিস খানের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্যে জালালুদ্দিনকে আশ্রয় দেননি। জালালুদ্দিন আশ্রয় না পেয়ে সিন্ধু ও উত্তর গুজরাট লুন্ঠন করে দেশে ফিরে যান। চেঙ্গিস খানও তাকে অনুসরণ করে ভারতের সীমানা থেকে ফিরে যান
কোন মন্তব্য নেই: