কাটরা মসজিদ হত্যাকাণ্ড ১৯৮৮

 কাটরা মসজিদ হত্যাকাণ্ড ১৯৮৮

তখন প্রগতিশীল (এরপর প্রগতিশীল বলবেন কি না তা পাঠককূলের উপর ন্যস্ত করলাম ) বাম সরকারের আমল, ১১ বছর অতিক্রান্ত। স্কুল-কলেজ, পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি, ঘরের কোণ, পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবেতেই দাদাদের প্রবেশ শুরু হয়ে গেছে (অনেকেই বলবেন বর্তমানেও হচ্ছে। তবে অলি-গলি থেকে আরও ভিতরে ঢোকার সাহস এখনও হয়েছে বলে মনে হয় না)। সেই সময় মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদে নামায পড়ার অধিকার নিয়ে এক ধুন্ধুমার কান্ড বেধে যায়।
 

★কাটরা মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ, ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে। তখন সুরে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। একসময় মসজিদে প্রায় হাজার দুয়েক মুসল্লি একত্রে নামায আদায় করতে পারতেন। প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পর বাংলার রাজনীতির পালা বদল ঘটে। এর ১৬ বছর পর রাজধানী চলে যায় কোলকাতায়। আরও কিছুদিন পর নবাবির চাকচিক্য হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদ পরিণত হয় আর পাঁচটা লোকালয়ের মত তবে কাটরা মসজিদ তার স্বকীয়তা হারায়নি, নিয়মিত নামায় হত। ১৮৯৭-এ এক ভূমিকম্পে মসজিদ কাম মাদ্রাসাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ১৯৪৭, আশপাশের এলাকাগুলিতে পূর্ববাংলার শরনার্থী স্রোত আছড়ে পড়ে এবং মুসলিমরাও জমি জায়গা ফেলে শরনার্থী হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায়ে নামাযি কমে যায়। তবে জুম্মার ও দুই ঈদের নামায নিয়মিত হত। ইংরেজ আমলেই ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ স্থাপত্যটি অধিগ্রহণ করে। তবে নামাযের কোন বাধা ছিল না।
 

★★ইতিমধ্যে জনাব ইয়াহিয়া সাহেব কাটরা মসজিদ চত্বরে একটি ইসলামি জলসার আয়োজন করেন। জলসার বিজ্ঞপ্তি দেখে এলাকার লাল-গেরুয়া মহল সক্রিয় হয়ে ওঠে। ততদিনে বাংলার বুকে বামফ্রন্টের সহায়তায় গেরুয়া ব্রিগেড বিজেপি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আর এস এস সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাটরা মসজিদ চত্বরে ১৯৮৮ নাগাদ নামায় সহ সবরকম ধর্মীয় কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়। পরিদৃষ্টে মুসলিম লীগের দুর্বল সংগঠন ঘোষণা করে নামায় বন্ধের ইস্তাহার তুলে নিতে হবে নয়তো শুক্রবার ২৪ শে জুন তারা কাটরা মসজিদ চত্বরে জুম্মার নামায পড়বে।

অভিযানের ঘোষিত দিনের ২০ দিন আগে বাম ফ্রন্ট ময়দানে নামে। তারা একটি লিফলেটের হাজার হাজার কপি ছড়িয়ে দেয়। লিফলেটে ছিল কাটরা মসজিদের ২৪.৬.৮৮-র জমায়েত ব্যর্থ করুন। লিফলেটে সিপিআইএম এম পি মাসুদল হোসেন, জয়নাল আবেদিন প্রমুখের নাম ছিল। লিফলেটে বিজেপি-র পাল্টা আন্দোলনের ভয়ও দেখানো হয়। সিপিআইএম-এর মধু বাগ, তরুণ দে, আব্দুল বারি ও ছায়া ঘোষের (ফু.ব.) নামও ছিল। এঁরা হিন্দু প্রধান এলাকায় গিয়ে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিতে থাকেন।

1) কাশীমবাজারঃ-প্রশাসনের কথায় কাটরা মসজিদ চত্বরে নামায পরিত্যাগ করে জনতা বহরমপুরের স্কোয়ার ফিল্ডে জুম্মা আদায় করে। ফেরার সময় পুলিশ তাদের কাশিমবাজারের দিক দিয়ে ফিরতে বলে। লাল সড়ক মোড়ে লাঠি-সড়কি-বল্লম-রামদা- খাঁড়া হাসুয়া নিয়ে একদল জনতা ঘর ফেরতা মানুষদের আক্রমণ করে। পোস্ট অফিস ও দোকান ঘরে আশ্রয় নেওয়া ভীত-সন্ত মানুষকে টেনে বার করে খুন করা হয়। কাশিমবাজারের নিমতলা এলাকায় ৭০-৭৫ জনের

একটি দলকে আক্রমণ করে মারা হয়। লাশগুলো কাটিগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়। 2) হাতীনগর-নিমতলা থেকে একদল মানুষ হাতীনগর পার হয়ে জীবননগর নামক মুসলিম

গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে ওদের আক্রমণ করে কচু কাটা করা হয়। 3) নাকুড়তলা -এখানে প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ জমায়েত হয় যারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জানত না। কাটরা মসজিদে নামায় পড়ার বিষয়টি পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে পুলিশ বেশিরভাগ মানুষকে অন্যত্র নামাযের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলে অল্পসংখ্যক মানুষের উপর পান্না নামক সিপিআইএম-এর স্থানীয় সমাজবিরোধী এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের

দিলিপ, রবি ইত্যাদিরা যোগ দিয়ে গনহত্যা করে।

4) নশিপুরঃ সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও পরিকল্পিত

গণহত্যাটি হয় ২৪ তারিখ সন্ধ্যেয় নসিপুর স্টেশনে

ট্রেন থামিয়ে। জিয়াগঞ্জ, লালগোলা, ভগবানগোলা

যাওয়ার প্যাসেঞ্জাররা ঠাসাঠাসি করে ৩৬৫

আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জারে উঠে পড়ে। সন্ধ্যে

৬ টা ১০-এ ট্রেনটি নশিপুর পৌঁছালে চেন ট্রেনে

ট্রেনটি থামানো হয় এর প্রায় ১০০-১৫০ সশস্ত্র

মানুষ ট্রেনের শেষ তিনটি কামরায় ঝাঁপিয়ে

পড়ে এলোপাথাড়ি আক্রমণ করে। এস ইউ সি

করা জনৈক হিন্দু মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় প্রচুর

মানুষকে বাঁচান। এখানেও প্রাণভয়ে লুকিয়ে থাকা

মানুষজন বলে রাতে ট্রাক নিয়ে এসে মৃতদেহগুলি

গায়েব করা হয়। নশিপুর পঞ্চায়েত ছিল ফরোয়ার্ড ব্লকের দখলে। এলাকায় বামফ্রন্ট ছাড়া আর কারও প্রভাব ছিল না। বিধানসভায় প্রচুর হৈ-চৈ হওয়ার পর জ্যোতি বসু সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশণ বসান যা ঠান্ডা ঘরে চলে যায়। একইভাবে ওয়াকফ কেলেঙ্কারি নিয়ে জ্যোতি বাবু বিচারক গিতেশরঞ্জন

বাবুকে দিয়ে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন বসান

যা কখনই দিনের আলো দেখেনি।

 
১৯৮৮ মানে বিজেপি-র উত্থান কাল। সেই উত্থানে হাত ধরে ছিল সিপিআইএম। সেই উত্থান ও সহায়তাকালে রাজাবাজার, মেটিয়াবুরজ ইত্যাদি মুসলিম প্রধান এলাকার মানুষকে শুনতে হত তারা নাকি আস্ত এক একজন দুর্ধর্ষ আই এস আই (আই এস নয়) চর। এমনকি এই সংযোগের ফল হিসাবে কলেজ সার্ভিস কমিশনের মত সর্বোচ্চ পর্যায়ের (যা কুক্ষিগত করা রেজিমেন্টেড দলগুলির প্রথম লক্ষ) ইন্টারভিউয়েও সংখ্যালঘু প্রার্থীকে নাগরিকত্ব নিয়ে কটু কথা শুনতে হত।

 

 

collected from facebook 

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.