ওমর বিন আব্দুল আজিজের চরিত্র ও কৃতিত্ব 

 খলিফা আব্দুল মালিকের ভাই আব্দুল আজিজের পুত্র অমর । তার পিতা দীর্ঘকাল মিশরের রাজ প্রতিনিধি এবং তার মা ছিলেন হযরত ওমর রাঃ এর নাতনি। তিনি দ্বিতীয় ওমর নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। ৭০৪ খ্রিস্টাব্দেও তার পিতার মৃত্যুর পর চাচা আব্দুল মালিক তাকে দামেসকে নিয়ে এসে নিজের মেয়ের সাথে বিয়ে দেন। আব্দুল মালিকের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী ওয়ালীদের রাজত্বকালে দ্বিতীয় ওমরকে হিজরাদের শাসনকর্তা রূপে মদিনায় পাঠান তার কোমল প্রকৃতি অথচ কঠোর শাসনব্যবস্থা অল্প কালের মধ্যে সেখানকার অসন্তুষ্ট জনসাধারণের হৃদয় জয় করে নেয়।

দ্বিতীয় ওমরের শাসনব্যবস্থা

খলিফা হয়ে তিনি তার সততা ও সাধুতা দিয়ে সবাইকে অবাক করেছেন। কবি বক্তা তোষামোদকারীরা, তার দরবার হত্যা করলো এবং আলিম ওলামারা তাদের থান পূর্ণ করলেন। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে বা বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে তিনি উমাইয়া রাজ্যের সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। মুসলিমদের নানা দল ও মতের সৃষ্টি ধর্মীয় ঐক্যের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সহনশ্রুতার নীতি অবলম্বন করে তিনি অনৈক্য ও বিরোধের অবসান করাতে চেষ্টা করেন। উমাইয়া শাসন শুরু হওয়ার সময় থেকে প্রার্থনা সভায় ও জুম্মার নামাজে হযরত আলীর প্রতি যে অভিশাপ বর্ষণ করা হতো তিনি সেই প্রথা সম্পূর্ণ হবে বন্ধ করেন। হযরত আলীর বংশধর গণ রসূল সাঃ কাছ থেকে উত্তরাধিকারী সূত্রে ফাদাক নামক বাগানের মালিকানা লাভ করেছিলেন তা দ্বিতীয়মর হযরত আলীর বংশধরদের ফিরিয়ে দেন।

ধর্মমত

দ্বিতীয় ইসলাম ধর্ম মতে গভীর বিশ্বাসী ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে খোরাসানের মধ্য এশিয়ায় তিনি এক নতুন রীতি অনুধাবন করেন। এই নীতি অনুসারে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে তাদের কোনোরকম কর দিতে হতো না। মিশরের জনসাধারণ ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ফলে কোন প্রকার কর আদায় না হওয়াই মিশরের রাজ কোষ শূন্য হতে থাকে। মিশরের একজন প্রদস্থ কর্মচারী অভিযোগ করল যে বেশি লোক মুসলিম হলে রাজস্ব কমে যাবে। তার উত্তরে বলেছেন,"আল্লাহ তার রাসূলকে ধর্ম প্রচারক হিসাবে পাঠিয়েছেন রাজস্ব আদায়কারী হিসেবে না।"
এইভাবে পোকারে ধর্ম প্রচারের উৎসাহিত করেন। রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আরব অনারব মুসলিমদের মধ্যে বৈষম্য দূর করে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

সংস্কার

সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সংহতি সাধন করাই ছিল দ্বিতীয় ওমরের প্রধান উদ্দেশ্য। আর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন লোকের একত্রিত হওয়া দ্বিতীয় ওমর প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছিলেন। প্রতিটি লোকের সৎ উদ্দেশ্য এবং পরস্পর সহযোগিতা না থাকলে তার সাম্রাজ্য খুব দুর্বল হয়ে পড়বে। মাওয়ালীরা তার মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করত কিন্তু তাদের আরব মুসলিমদের সাথে সমান অধিকার হতো না ফলে দেখা যায় যে উমাইয়া শাসনকাল থেকে মাওয়ালীদের মধ্যে বিদ্রোহের সূচনা হতে থাকে। দ্বিতীয় মোড় খলিফা হওয়ার পর আরবি এবং অনারবীয় মুসলিমদের মধ্যে কার বিভেদ দূর করতে চেষ্টা করেন।
অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও ওমরের ছিল সমভাবাপন্ন নীতি।

রাজস্ব বিভাগীয় সংস্কার:

রাজ্যের অর্থনৈতিক অডন এর উন্নতি করাতে সচেষ্ট হন মুসলিমরা অমুসলিমদের কাছ থেকে জমি কিনতে শুরু করে তখন এই সম্পর্কে দ্বিতীয় ওমর আলেমদের সাথে পরামর্শ করে দুটি আইন জারি করেন প্রথম আইনে বিজিত অঞ্চলে অমুসলিমদের জমি কে মুসলিমরা যদি ক্রয় করে আর সরকারের অনুমতির না নেই তার ওই জমি সরকারি খাস বলে গণ্য হবে দ্বিতীয়। যে ১০০ হিজরী পর্যন্ত যেসব মুসলমানের কাছে খারাপ জমি আছে তারা শুধু উশর দিয়ে ওই জমি রাখতে পারবে। কিন্তু ভবিষ্যতে প্রথম ওমরের প্রবর্তিত নীতি অনুযায়ী খারাপ জমি কোন অবস্থাতেই উশর জমিতে পরিণত করা যাবে না দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখে ওমর মুসলিমদের ওপর খারাজ ধার্য করেন এর ফলে বায়োস্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার


ওমর বিন আব্দুল আজিজ তার বংশের অন্যান্য খলিফাদের চেয়ে খোলাফায়ে রাশেদীনদের জীবন আদর্শ দ্বারা বিশেষ প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি হযরত আবু বকর রাঃ ও ওমরের মত সহজ সরল জীবন যাপন পছন্দ করতেন তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনদের মত নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণের জন্য সামান্য ভাতা গ্রহণ করতেন উমাইয়া যুগের সংহতি কলহ রক্তপাত ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে তার খেলাফত কাল স্বল্পকালের জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দের ছিল তার মৃত্যুর পরেই হুমায়ুনাযুগের পুরাতন বৃদ্ধি পুনরায় চালু হয় এবং ওমরের শাসনব্যবস্থা সম্পন্ন রূপে বাতিল করা হয় কোন কোন ঐতিহাসিক অভিযোগ করেছেন যে ওমর তার সংস্কারের মাধ্যমে শুধু উমাইয়া খেলাফতের পতন ডেকে এনেছিলেন। হযরত আলীর বংশধর গণ তার নীতির ফলে উমাইয়া স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে আরও সচেতন হয়ে ওঠে মাওয়ালীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া ও অধিকারের জন্য সঙ্গবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করার অনুপ্রেরণা লাভ করে। কিন্তু এই জন্য ওমরকে দোষারোপ করা যায় না ও মায়াদের পতনের জন্য তাদের প্রতি অবিচার ও অসাম্য দায়ী ওমর এই অসাম্য দূর করার চেষ্টা করেছিলেন। তার পরবর্তী শাসকগণ আবার পুরাতন নীতি প্রবর্তন করায় এই বংশের পতন দ্রুত ঘনিয়ে এসেছিল।

 

 

 

 

 keyword

  •  ওমর বিন আব্দুল আজিজ কে দ্বিতীয় ওমর বলা হয় কেন
  • ওমর বিন আব্দুল আজিজের চরিত্র ও কৃতিত্ব 
  • ওমর বিন আব্দুল আজিজের প্রশাসনিক সংস্কার 
  • ওমর বিন আব্দুল আজিজের পরিচয় দাও 
  • ওমর বিন আব্দুল আজিজ এর অবদান 
  •  দ্বিতীয় ওমরের শাসনব্যবস্থা
  •   দ্বিতীয় ওমরের ধর্মমত 
  • দ্বিতীয় ইসলাম ধর্ম মতে গভীর বিশ্বাসী ছিলেন
  • রাজস্ব বিভাগীয় সংস্কার: 

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.