ইবনে বতুতা ছাড়াও দুনিয়া পরিভ্রমণ করে বিখ্যাত আরেকজন মুসলিম পরিব্রাজক যিনি বাংলাদেশে আগমণ করেছেন; তিনি চীনা এডমিরাল ‘ঝেং হে’।
বিশ্বের ইতিহাসে তার অবস্থান ক্রিস্টোফার কলম্বাস আর ভাস্কো দা গা মা’র পাশে। । সাম্প্রতিককালে কিছু পশ্চিমা ঐতিহাসিক দাবী করেছেন কলম্বাসের অ্যামেরিকা আবিষ্কারের আরও ৭০ বছর আগে ‘ঝেং হে’ ও তার সাথীরা অ্যামেরিকা আবিষ্কার করেন। তিনি চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিব্রাজক। ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ৭ বার সমুদ্র অভিযানে বের হন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভ্রমণ করেন ব্রুনেই, জাভা, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত, ইরান, মক্কা-মদীনা থেকে পূর্ব-আফ্রিকার সোমালিয়া-কেনিয়া।
‘ঝেং হে’র আসল নাম ছিল ‘মা হে’, চীনা ভাষায় ‘মা’ অর্থ মুহাম্মাদ। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন ইরানি, হানাফি মাজহাবের অনুসারী। দাস হিসেবে বিক্রি হওয়ার পর আস্তে আস্তে উপরে উঠে তিনি একসময় চীনা সম্রাটের পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষে পরিণত হন। সম্রাটের আদেশে তিনি ১৪০৫ সালে প্রথম সমুদ্রযাত্রার জন্য বের হন। এ যাত্রায় তার নৌবহরে ছিল ৩১৭ টি জাহাজ আর প্রায় ২৮,০০০ সৈন্য ও নাবিক। তার জাহাজগুলো ছিল সে সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজ। উদাহরণস্বরূপ, কলম্বাসের জাহাজ যখন ছিল ২৬ মিটার দীর্ঘ তখন তার জাহাজের দৈর্ঘ্য ছিল ১২০ মিটার। তিনি বিভিন্ন দেশে চীনা সম্রাটের দূত হিসেবে গিয়ে তাদের সিল্ক, পোরসেলিন, স্বর্ণ ইত্যাদি উপহার দেন আর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন উপহার ফেরত নিয়ে যান চীনে। তিনি চীনে প্রথমবারের মত উটপাখি, জেব্রা, উট, হাতির দাঁত ইত্যাদি নিয়ে যান। তিনি যখন বাংলায় আসেন সে সময় বাংলার সুলতান ছিলেন গিয়াসউদ্দীন আযম শাহ। সুলতান তার পোষা জেব্রাকে চীনা সম্রাটের জন্য উপহার হিসেবে তার হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেন। ইন্দোশিয়ায় চীনা কমিউনিটিতে ইসলাম প্রচারেও ‘‘ঝেং হে’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সেই সাথে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা হয় তার আদেশে।
১৪৩৩ সালে তার সপ্তম ও সর্বশেষ সমুদ্র অভিযানে থাকাকালে ভারতের কালিকাট বন্দরে তার মৃত্যু হয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই: