১৭৮২ সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সিলেটে বিপ্লবী সুফিদের নেতৃত্বে জনগনের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। ========================================== গতকাল ছিল সিলেট তথা বাংলাদেশের আজাদীপাগল মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। ১৭৫৭ সালের পলাশিতে সিরাজ উদ দৌলার পরাজয় ও বক্সারের যুদ্ধে মীর কাশিমের পরাজয়ের পর জনগনের পক্ষ থেকে সিলেটের শাহী ঈদ্গাহ ময়দানে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহ ও যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। হযরত শাহজালালের দরগার তত্ত্বাবধায়ক পীরজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ হাদী (হাদা মিয়া) ও তার ভাই সৈয়দ মাহদী (মাদা মিয়া)র নেতৃত্বে ১৭৮২ সালের মহররম মাসে এ বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য পীরজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ হাদী এখনকার মাজার পূজারী খাদেমদের মত ছিলেন না। বরং ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ এক সাহসী মুজাহিদ। সেদিন পীরজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ হাদী (হাদা মিয়া) মুহররমের র্যালীর নাম করে তলোয়ার ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সিলেটের তৎকালীন ব্রিটিশদের কতৃক নিযুক্ত কালেক্টর লিন্ডসে তার এদেশীয় এজেন্ট বেঈমানদের মাধ্যমে তাদের এ পরিকল্পনা জেনে ফেলে। এবং বিপুল সৈন্য নিয়ে সিলেট শহরের কেন্দ্রীয় ঈদ্গাহের টিলায় জমায়েত হওয়া পীরসাহেবের বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। এ সময় কালেক্টর লিন্ডসে প্রথমে পীরসাহেবকে আত্নসমর্পনের আহবান জানান। তখন পীরসাহেব আত্নসমর্তপন না করে দেশ ও ইসলামের জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াইয়ের প্রত্যয় ঘোষনা করেন এবং লিন্ডসে কে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানান। প্রথমে পীরসাহেবের আক্রমনে লীন্ডসের তরবারী ভেঙ্গে যায়। আতংকিত লিন্ডসে কাপুরোষিতভাবে তখন পিস্তল বের করে পীর সাহেব সৈয়দ আব্দুল হাদী (হাদা মিয়া)কে গুলি করে হত্যা করে এবং সৈন্যদের আক্রমনের নির্দেশ দেয়। এতে পীর সাহেবের ভাই সৈয়দ মাহদী (মাদা মিয়া) সহ অনেকেই শহীদ হোন। এই শহিদদের স্মরনে সিলেটের শাহী ঈদ্গাহের পাশের টিলার নাম রাখা হয় হাদা মিয়া-মাদা মিয়া টিলা। যা এখনো এই নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে হয়তো পীরসাহেব শহীদ হোন, কিন্তু শাহজালালের মাটির সন্তান হিসেবে শাহজালালের তরবারীর যে গৌরবময় উত্তরাধিকারের প্রমান দিয়ে যান, সেটাই সকল আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এই জমিনে আজীবন বিপ্লবীদের প্রেরনা যোগাবে । তিনি বেঁচে থাকবেন আজাদীপাগল মানুষের হৃদয়ে প্রেরণার উৎস হয়ে।
লিখেছেন:- ইমরান লস্কর
কোন মন্তব্য নেই: