রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের মত সপ্তদশ শতাব্দীতে ইস্তাম্বুলেও দুই ভাই ছিলেন যাদের ধ্যানজ্ঞান ছিল আকাশে ওড়া। এদের একজন লাগারি হাসান চেলেবি, ইতিহাসের প্রথম ‘রকেট ম্যান’। আর তার বড় ভাই ছিলেন ‘হেজারফেন’ আহমেদ চেলেবি।
‘হেজারফেন’ শব্দের ভাবার্থ পলিম্যাথ/ যে বিজ্ঞানী অনেক বিষয়ে দক্ষ। আহমেদ চেলেবি ছোট থেকেই বিজ্ঞানমুখী ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের সময় দশম শতাব্দীর আরেক তুর্কি মুসলিম বিজ্ঞানী ‘ইসমাইল ইবন হাম্মাদ আল যাওহারি’র বিভিন্ন গবেষণা তার হাতে আসে। খোরাসানের নিশাপুর শহরের অধিবাসী আয যাওহারী অনেক গবেষণা শেষে ‘প্রথম উড়ন্ত মানব’ আন্দালুসীয় বিজ্ঞানী আব্বাস ইবন ফিরনাসের অনুকরণে দুই হাতে দুই পাখা বানিয়ে একটি বড় মসজিদের ছাদ থেকে ঝাঁপ দেন। কিন্তু তার পরীক্ষা ব্যর্থ হয় এবং দুঃখজনকভাবে তিনি সেই ঘটনায় পড়ে মারা যান।
আহমেদ চেলেবি ‘আয যাওহারি’র গবেষণাগুলোকে পুনঃমূল্যায়ন করেন। ছোটবেলার আকাশে উড়ার স্বপ্ন আবার তার মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সেই সাথে তিনি ঈগলের পাখা বিশ্লেষণ করে তার মত করে নিজের জন্য দুটি পাখা তৈরি করেন। এবার তিনি প্রায় দোতলা সমান উঁচু মিম্বার থেকে আট-নয়বার ঝাপ দিয়ে বাতাসের সাহায্যে ওড়ার চেষ্টা করেন। নিজে কিছুটা কনভিন্স হওয়ার পর বয়সে তরুণ আহমেদ চেলেবি একটা বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন।
‘গালাতা টাওয়ার’ নামে বসফরাসের অপর প্রান্তে, ইস্তাম্বুল শহরের ইউরোপীয় অংশে প্রায় ২০০ ফিট উঁচু একটি টাওয়ার ছিল। একদিন সকালে তিনি তার পাখা পরিধান করে সেই টাওয়ারে আরোহণ করেন। এরপর অবাক উৎসুক জনতার চোখের সামনে আল্লাহর নাম নিয়ে ঝাঁপ দিয়ে দেন। সেদিন প্রচুর দক্ষিণ-পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে আহমেদকে আর আল্লাহর রহমতে আয-যাওহারির ভাগ্য বরণ করতে হয়নি। বায়ুর সাহায্যে প্রায় ২ মাইল উড়ে বসফরাস পার হয়ে ইস্তামবুলের এশীয় ভাগে এসে পড়েন তিনি।
তার অজান্তেই এক প্রাসাদের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন সুলতান চতুর্থ মুরাদ। তিনি পরে তাকে ডেকে এক থলে স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন এবং বলেনঃ এ এক ভয়ানক লোক। এর মনে যাই আসে তাই করে। এ ধরণের লোককে এখানে রাখা ঠিক হবেনা। অতঃপর তাকে আলজেরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ১৬৪০ সালে ৩১ বছর বয়সে তিনি সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন।
ইস্তামবুল শহরের একটি বিমানবন্দরের না তার সম্মানে ‘হেজারফেন বিমানবন্দর’ রাখা হয়েছে।
লিখেছেন:- মুহাম্মদ সাজিদ কারিম
কোন মন্তব্য নেই: