কাদেরিয়া মতবাদ
কাদেরিয়াতের পরিচয়:-
কালকে ইসলামের প্রথমদিকে দার্শনিক জনতত্ত্বের একটি এ আন্দোলনে পাওয়া প্রাচীনতম দলিল হচ্ছে হাসান আল-বাসরীর রেসালা জাতীয় সম্পদের ধনাত্মিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে মুসলিম দর্শনের প্রথম যুক্তিবাদী দার্শনিক সম্প্রদায় কাদের যাত্রা শুরু হয়। বিখ্যাত মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদ হাসান বসরী মানুষের স্বাধীন ইচ্ছে শক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কাদেরিয়া সম্প্রদায়ের চিন্তা বীজ বপন করেন। তার শিষ্য মা বাদ আলজুহানি এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। আরবি কাদার শব্দ হতে কাদরিয়া শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। কাদার অর্থ শক্তি। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা মানুষের স্বাধীন শক্তি ও কর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন বলে তাদেরকে কাদেরিয়া বলা হয়। কাদেরিয়া গণ বলেন, “মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মশক্তি রয়েছে.। মানুষ তার কাজের জন্য দায়ী”। এ কারণেই মানুষ মন্দ কাজের জন্য শাস্তি ও ভালো কাজের জন্য পুরস্কার পেয়ে থাকে। ইচ্ছা শক্তি না থাকলে মানুষকে কাজের জন্য দায়ী করা এবং সেই হিসেবে পুরস্কার দেওয়া ও শাস্তি দেওয়া জুলুম হতো। মহান আল্লাহ কোনোক্রমেই এই জাতীয় জুলুম করতে পারেন না এই মতের সমর্থনে কাদেরিয়া গণ কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত উল্লেখ করেন যেমন:-
ক. যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজ করবে সে ব্যক্তি পাপ কাজ করবে তার নিজের ক্ষতির জন্যই। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহা বিজ্ঞানী।
(সূরা নিসা: ১১১)
খ. নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করে। (সূরা রাদ:১১)
গ. কেউ যদি বিন্দুমাত্র সৎ কাজ করে থাকে তাহলে সেটা দেখবে আর কেউ যদি বিন্দুমাত্র মন্দ কাজ করে থাকে, তাও সে দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল: ৭-৮)
কাদেরিয়া সম্প্রদায়ের কোন কোন চিন্তাবিদ মাঝে মাঝে মানবীয় এলাকার বাইরে চলে গিয়েছিলেন এবং মানুষের ক্ষেত্রেও দু একটি ঐশী শক্তি প্রয়োগ করেছেন। ন্যায় অন্যায় ভালো-মন্দ নির্বাচনে ব্যাপারে তারা মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতা দিয়েছেন। এসব কারণে কাদরিয়া গণ সাধারণ মানুষ এর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাননি। রাষ্ট্রপক্ষ ও তাদেরকে দমনের সর্বাত্মক ব্যবস্থা করে। মা বাদ আলজুহানি কে হত্যা করা হয়।
*কাদরিয়ার সম্প্রদায়ের উৎপত্তির কারণ :-
যাবারিয়া প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাদরিয়া মতবাদ জন্ম লাভ করে। মা বাদ জোহানি এ মতবাদের স্বপ্ন দ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কু শাসন ও কুকর্মের জন্য উমাইয়াদীর অভিযুক্ত করলে আব্দুল মালিক তাকে প্রাণদণ্ড দেন। তারপরে ইউনুস আলী ও অভিমনি আলতামিস কি এই মতবাদের বিকাশ ঘটান কিন্তু নুমানের মত দামেস্কি কেউ প্রাণদণ্ড দেওয়া হলে এ মতবাদের বিকাশ থেমে যায়। তারা উমাইয়া শাসকদের পাপাচারি ঘোষণা করে তাদের কর্ম তৎপরতা শুরু করেন।
* ইচ্ছা স্বাধীনতা সম্পর্কে কাদরিয়া মতবাদ:-
ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে কাদেরিয়ারা বলেন, “ম্যান ইজ দ্যা মাস্টার অফ হিস উইন ওয়ার্ক” । এই মতবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে তাদের যুক্তিগুলো হল
১) আল্লাহ জুলুম করেন না:-কোরআনে এসেছে কেউ যদি অনু পরিমান ভালো কাজ করে তাকে তার প্রতিদান দেওয়া হবে। আবার কেউ যদি বিন্দুমাত্র মন্দ কাজ করে তার পরিণামও তাকে ভোগ করতে হবে। এখন মানুষের যদি ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতায় না থাকে তাহলে তাকে শান্তি বা শাস্তি দেওয়া কি জুলুম হবে না? অথচ আল্লাহ তাআলা সব জুলুম থেকে পবিত্র!
২) আল্লাহ মন্দ কাজ করেন না মানুষের ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা যদি না থাকে তাহলে মানুষের সব কাজের দায় সরাসরি আল্লাহ উপর পতিত হবে। সেক হিসেবে আল্লাহই হবেন ব্যভিচারী মদ্যপ বা চোর । কিন্তু আল্লাহ তাআলা হলেন এসব মন্দ কাজের ধারণা থেকে পুত ও পবিত্র ।কাজেই মানুষের ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা অস্বীকারের উপায় নেই।
কোন মন্তব্য নেই: