মুরজিয়া মতবাদ
*মুরজিয়া মতবাদের পরিচয়:-
চরমপন্থী খারিজী ও শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে মুসলিম সমাজে মুরগি যে চিন্তা গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে, সব ক্ষেত্রে সহনশীল কোমল মনোভাব প্রদর্শনী এই মতবাদের মূলনীতি ছিল। মুরজিয়া শব্দটি আরবি আর্জা শব্দ হতে উদ্ভূত। আর্জা অর্থ সে মুলতুবি রেখেছে বা সে স্থগিত রেখেছে। তাই মুরজিয়া বলতে এমন সমুদয় কে বোঝায় যারা হাশরীর দিন মহান আল্লাহর বিচারের পূর্বে পাপী মুসলিমের বিচার করা কোন রায় দেওয়া বা রায় বাস্তবায়ন করাকে স্থগিত রাখার উপদেশ প্রদান করে।
*উৎপত্তি:-
ঐতিহাসিক প্রয়োজনে মুরজিয়া চিন্তা গোষ্ঠী আবির্ভাব ঘটে.। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর ইন্তেকালের পর গোত্রীয় হিংসা বিদ্বেষ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রথম চার জন খলীফার পর উমাইয়ারা ক্ষমতা দখল করে তাদের শাসকদের অধিকাংশই ছিল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উদাসীন। তাই খারিজি ও শিয়া সম্প্রদায় অন্যান্য সাধারণ মুসলমানদের সঙ্গে ও মাইয়ারে কেউ সুনজরে দেখতে পারতো না। মুরজি এখন মুসলমানদের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঘোষণা করেন উমাইয়া দের পৌত্তলিক মনে করে নিন্দা করা উচিত নয় কারণ তারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং এ কারণেই শেষ বিচারের দিন স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক শাস্তি প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত তাদেরকে সহ্য করা উচিত। যেসব ধর্মাবলম্বী অপাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা না করা এবং তাদের পত্তলিক বলে ঘোষণা না করা ছিল মুরজিয়া মতবাদের মূল কথা। সব ক্ষেত্রেই কোমল মনোভাবই এই গোষ্ঠীর মূলনীতি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সহনশীল কোমল চিন্তা হারা হতে মুরজিয়া মতবাদের উৎপত্তি হয় এ কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরকে মুরজিয়া মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। অধ্যাপক লেক ডোনাল্ড অবশ্য মরিচা সম্প্রদায়ের উত্থানে নৈ প্রত্যয়ে বিভিন্ন কারণ উদ্ভাবন করেছেন তিনি বলেছেন পূর্ববর্তী মুসলমান গণ এক ধরনের অদৃষ্ট বাদের শিকার ছিলেন। তারা পাপ সম্পর্কিত একটি ভয়ানক চেতনাবোধের শিকার ছিলেন এবং জগতকে তারা এমন একটি অশুভ জিনিস মনে করতেন যা মানুষকে স্বর্গ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে পাপ সম্পর্কে তাদের মনে ভীতি ও নৈরাশ্যবাদ সৃষ্টি করে। উমাইয়া শাসনামলে বহু লোক মুরজিয়া মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় উমাইয়া শাসকদের সমর্থক হিসেবে এ মতবাদ রাজকীয় পৃষ্টপোষকতা লাভ করে এবং ইসলামের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের পরিণত হয় মুরজিয়াদের আন্দোলন ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্ত আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ। হানাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি মুরজিয়া সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট সমর্থক ছিলেন ।
*মতবাদ:-
এক) মুমিনকে কাফের বলা যাবেনা:-মুর্জিয়া সম্প্রদায়ের মূল মতবাদ হল যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি ঈমান এনেছে সে যত গুনাহই করুক এবং আল্লাহর বিধানে তার শাস্তির যে বিধানে থাকুক তাকে কাফির বলা যাবে না।
দুই ) মুসলিম উম্মাহর একতা:-যেকোনো মাযহাব বা সম্প্রদায়ের মুসলমান প্রত্যেকেই এক ও অভিন্ন সমাজের অন্তর্গত তাই কোন মুসলিম অপর মুসলিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না।
তিন) আল্লাহ প্রেম:-মরছিয়ারা আল্লাহর ভয়ের পরিবর্তে আল্লাহর প্রেমের উপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেন। তাদের মতে আল্লাহ ভীতি মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাই এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাই মানুষকে তার কাছে টেনে নেয়।
চার) গুনাহ:- মুরজি আর চিন্তাবিদগণ কাবিরা ও সগিরা গুনাহের মধ্যে যে পার্থক্য নিরূপণ করেছেন তা মুসলিম চিন্তার ইতিহাস এই উল্লেখযোগ্য অবদান হিসেবে বিবেচিত। তাদের মতে কবিরা গুনাহ যদি শিরকের পর্যায়ে উক্ত না হয় তবে কোন মুসলমান চিরদিন জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে না। সাগিরা গুনাহের জন্য অনুশোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে মুসলমানগণ জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা পাবে।
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে মুরগিয়ার সম্প্রদায়ের চিন্তাধারা মুসলিম দর্শনের অগ্রগতির ইতিহাসে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
কোন মন্তব্য নেই: